“কুড়িগ্রামের পুরনো নাম ছিল ‘কুড়িগঞ্জ! হাজার বছরের লুকানো ইতিহাস – জানলে অবাক হবেন”

কুড়িগ্রাম
অনলাইন ডেস্কঃ

“যে ইতিহাস কুড়িগ্রামবাসীরও অজানা! খেন রাজবংশ থেকে ব্রিটিশদের হাতে কুড়িগ্রাম”

IMAGE By Dr. Asif Md. Rezaur Rahman

কুড়িগ্রামের ইতিহাস: প্রাচীন রাজ্য থেকে মহাকুমা প্রতিষ্ঠা

বাংলাদেশের উত্তরের ঐতিহাসিক জনপদ কুড়িগ্রাম একসময় মহাস্থানগড় ও কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল। কামরূপ ভেঙে ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত হলে, কুড়িগ্রামের উত্তরাংশ কোচবিহারের নিয়ন্ত্রণে যায় এবং দক্ষিণাংশ উয়ারি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

দ্বাদশ শতাব্দীতে খেন রাজবংশ এখানে শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। রাজা চক্রধ্বজ ও নীলাম্বর উলিপুরের চত্রা থেকে শাসন করতেন। তবে ১৪১৮ সালে গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহ নীলাম্বরকে পরাজিত করলে অঞ্চলটি মুসলমানদের দখলে আসে এবং পরবর্তীতে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

ব্রিটিশ শাসনামলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হরে রাম ও দেওয়ান দেবী সিংকে কুড়িগ্রামের প্রশাসনের দায়িত্ব দেয়। ১৭৭০ সালের মহাদুর্ভিক্ষে এই অঞ্চলে ব্যাপক বিদ্রোহ দেখা দেয়। তখন কুড়িগ্রাম আলাদা প্রশাসনিক ইউনিট ছিল না; বড়বাড়ি, উলিপুর, চিলমারি ও নাগেশ্বরী অঞ্চলে বিভক্ত ছিল।

অবশেষে ১৮৭৫ সালের ২২ এপ্রিল ব্রিটিশ সরকার কুড়িগ্রামকে “কুড়িগঞ্জ মহাকুমা” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। এতে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ি এলাকা অন্তর্ভুক্ত হয়।

প্রাচীন কালে এই অঞ্চলকে বলা হতো “কুঁড়িগঞ্জ”। মূলত, এটি একটি স্থানীয় নাম যা গ্রামের বা অঞ্চলের মানুষের ব্যবহারে প্রচলিত ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে প্রশাসনিক এবং নথিপত্রের জন্য অনেক স্থানীয় নামকে মানক রূপ দেওয়া হয়। তখন “কুঁড়িগঞ্জ” থেকে ধীরে ধীরে মানক বাংলা উচ্চারণ ও লিখন প্রক্রিয়ায় “কুড়িগ্রাম” রূপান্তরিত হয়।

মূল কারণগুলো:

  1. প্রশাসনিক সংস্কার: ব্রিটিশরা স্থানীয় নামগুলোকে সহজে লিখতে ও রেকর্ডে রাখতে চেয়েছিল।
  2. ভাষার পরিবর্তন: বাংলা ভাষায় কণ্ঠনিষ্ঠা (উচ্চারণের সহজীকরণ) অনুযায়ী “ুঁ” পরিবর্তিত হয়ে “ু” রূপে আসে।
  3. দীর্ঘমেয়াদি প্রচলন: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় জনগণও নতুন রূপ “কুড়িগ্রাম” ব্যবহার করতে শুরু করে।

সারসংক্ষেপে: “কুঁড়িগঞ্জ” → প্রশাসনিক ও উচ্চারণগত কারণে → কুড়িগ্রাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *